‘আমি কাউকে ব্যথা দেওয়ার জন্য, অপমান করার জন্য কিংবা উপহাস করার জন্য মিমিক্রি করি না। শুধু মিমিক্রি করতে ভালোবাসি, তাই করি। আর সেটাই দর্শককে আনন্দ দেয়।’ বাংলাদেশের এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এভাবেই নিজের ভালোলাগা, মন্দলাগার নানা কথার ঝাঁপি খুললেন মীর আফসার আলী ওরফে মীর।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশের সব মানুষের পক্ষ থেকে আপনাকে প্রথমেই জানাই শুভেচ্ছা।
মীর : আমার তরফ থেকেও আপনাদের সবাইকে জানাই অজস্র ধন্যবাদ ও সেলাম। বহুদিন বাদে আপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কথা হবে।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশে তো আপনি যথেষ্ট জনপ্রিয়...
মীর : সবই আল্লাহর বিশেষ ইচ্ছা। তাঁর কৃপা না থাকলে এত অগণিত মানুষের মনে আমার ঠাঁই হতো না।
এনটিভি অনলাইন : আপনি তো মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশ যান?
মীর : হ্যাঁ, যেতে তো হয়ই। ওখানে বিভিন্ন রিয়্যালিটি শোতে যাই। এ ছাড়া অনেক ইভেন্ট থাকে। অনেক সময় রেডিও জকির ক্রাশ কোর্স করাতে যাই।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশ বলতে কী মনে পড়ে?
মীর : বাংলাদেশ মানেই (একটু ভেবে নিয়ে) আতিথেয়তা। সবাই এত আপন করে নেয় যে মনেই হয় না, আমি তাঁদের কাছে নতুন মানুষ। বাংলাদেশের এই আতিথেয়তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। আর অবশ্যই বাংলাদেশের লাইফস্টাইল আমাকে আকৃষ্ট করে। বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে সব সময়ই সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ কাজ করে, যা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
এনটিভি অনলাইন : আপনার শো মীরাক্কেল বাংলাদেশেও খুব জনপ্রিয়, সেটা জানেন?
মীর : এর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আসলে আমার ফাজলামোটা যে মানুষ এতটা সিরিয়াসলি নেবে, তা আমি নিজেও ভাবিনি। সব বয়সের মানুষই যে এই রিয়াল্যিটি শো-কে পজিটিভলি নেবে, তা আমার ভাবনার বাইরে ছিলো।
এনটিভি অনলাইন : আপনি কি বাস্তবেও এতটা রসিক মানুষ?
মীর : রসিক কি না জানি না, তবে সবাই বলে আমি খুব ফাজিল। আর এটা ছাড়া আমি তো কিছুই করতে পারি না। সারাটা দিন যেটুকু সময় পাই, কাজ করতে করতেই চলে যায়।
এনটিভি অনলাইন : শুনেছি আপনি নাকি দিনে মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমান?
মীর : আসলে সকালে রেডিওতে চাকরি করি তো, তাই ভোর চারটে কলটাইম থাকে। আর তা ছাড়া বিভিন্ন অ্যাঙ্কারিং শো থাকে। ফলে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। আসলে আমি যে ঠিক কেমন মানুষ, তাই মাঝেমধ্যে বুঝে উঠতে পারি না।
এনটিভি অনলাইন : আপনার শো মানেই হাসি। কিন্তু সেই হাসানোর ক্ষেত্রে আপনি কতটা সিরিয়াস?
মীর : মানুষকে হাসানোই আমার কাজ। কিন্তু সেই কাজটা যতটা হালকা দেখতে লাগে, ততটাই সিরিয়াস। আর যেকোনো ভালো কাজ সিরিয়াসনেস ছাড়া হয় না।
এনটিভি অনলাইন : আপনি যখন রেডিও জকি হিসেবে অনর্গল কথা বলার কাজটা নিয়েছিলেন, তখন অনেকেই এটাকে পেশা হিসেবে ভাবতেই পারত না...
মীর : আমি বরাবরই বেশি কথা বলি আর কথা বলতে ভালোবাসি। তাই একটা সময়ে যখন চাকরি পাইনি, তখন এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিলাম। পরে দেখলাম, এটাই আমার কপালে স্যুট করেছে।
এনটিভি অনলাইন : কলকাতায় হায়েস্ট পেইড অ্যাঙ্কর আপনি। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে কেউ নেই। কেমন লাগে?
মীর : আমার সৌভাগ্য যে আমি এত কাজ পাই। সবাই যখন আমাকে দেখার জন্য অটোগ্রাফ নিতে ভিড় করে, আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। এটাই উপভোগ করি আমি। আমি চাই, মানুষ আমাকে মনে রাখুক। আর আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্বাস করি না। আমার নিজের কাজের মূল্যায়ন আমি নিজেই ঠিকভাবে করতে পারি।
এনটিভি অনলাইন : আপনার নিজের নামে শো। অনেক সিজন কেটে গেল শোটার। কেমন লাগে?
মীর : খুব উপভোগ করি। কারণ, একটা সময় খুব কষ্ট করেছি। কত দিন খাবার খেতে পারিনি। একদিন খেতে বসেছি, সেই সময় তো প্রমোটরের দল লোক নিয়ে এসে বাড়ি থেকে বের করে দেয় আমাকে। অনেক কষ্ট করে এমএ পাস করেছি। তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এমন কিছু করব যাতে মানুষ আমার নামটা মনে রাখবে। কিছু মানুষ সেই সময় আমার পাশে থাকলে সুবিধা হতো। কিন্তু ভাগ্যিস কেউ থাকেনি। তাহলে আমার ভেতর এই জোশটা আসত না।
এনটিভি অনলাইন : এটা তো আপনার অভিমান...
মীর : একেবারেই না। অসংখ্য মানুষ আমায় ভালোবাসেন, সেটাই তো অনেক। মানুষ আমায় ভালোবাসলে তবেই আমি টিকে থাকতে পারব।
এনটিভি অনলাইন : আপনার শো আপনার পরিবার দেখেন?
মীর : আব্বা-আম্মা তো দেখেনই। তবে মুশকান, মানে আমার মেয়ের খুব একটা পছন্দ নয় আমার শো। আর আমার স্ত্রীর (ড. সোমা ভট্টাচার্য) হাসপাতাল, চেম্বার করে সময় খুবই কম। তবে ও যখন সময় পায় শো দেখতে বসে পড়ে।
এনটিভি অনলাইন : আপনার গলা তো মন্দ নয়...
মীর : আপনারা কেউ বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমি বহুদিন ধরেই গানের চর্চা করি। আমার ব্যান্ড ‘ব্যান্ডেজ’ অনেকটাই নাম করে ফেলেছে এর মধ্যে।
এনটিভি অনলাইন : ব্যান্ডেজ নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা?
মীর : অবশ্যই আছে। দর্শক আর আশীর্বাদ থাকলে মীরাক্কেল আর ব্যান্ডেজ বহুদূর যাবে। দুটোরই প্রধান কাজ মানুষকে হাসানো। আজকাল ব্যস্ততার ফাঁকে, কাজের ফাঁকে আমরা কোথায় যেন আনন্দ করতে ভুলেই গেছি। আমি সেই কাজটাই করি। মানুষকে হাসানোর চেষ্টা করি। তাই মানুষ যতদিন নেবেন, ততদিন আমিও কাজ করে যাব।
এনটিভি অনলাইন : এত কাজ, এত চাপের মধ্য থেকে আপনি নিজে হাসতে পারেন?
মীর : শো থাকলে আর ঘরে টাকা এলেই আমি খুশি। হাতে কাজ না থাকলে আর কিসের আনন্দ!
এনটিভি অনলাইন : অনেক ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
মীর : আমার তরফ থেকেও ধন্যবাদ আপনাদের।
Comments