বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ঘরে বসে টাকা উপার্জনের অনেক পন্থা তৈরী হয়েছে। শুধু যে কমিপউটার বিশেষজ্ঞরাই এ কাজ করছেন তা নয়। লেখালেখির জগতেও রয়েছে প্রচুর কাজ, যেগুলো ঘরে বসেই করা সম্ভব। এবং আপনি উপার্জন করতে পারেন বৈদেশিক মূদ্রা।
অনেকের বদ্ধমূল ধারনা হলো, ফ্রিল্যান্সিং কেবলমাত্র টেকনিক্যাল মানুষদের জন্য। তা ঠিক নয়। একটি বিশাল অংশের ফ্রিল্যান্সিং হলো লেখালেখির কাজ। তবে সেই লেখালেখিগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্রিয়েটিভ কাজ নাও হতে পারে। এগুলো মূলত হয়, কনটেন্ট লেখা। যেমন ধরুন, কোনও ওয়েব সাইটের জন্য মার্কেটিং তথ্য লেখা, কোম্পানী প্রোফাইল লেখা, স্ক্রীপ্ট লেখা, পণ্যের বিস্তারিত গুছিয়ে লেখা – এমন হাজারটা কাজ, যা ইংরেজী জানা ছেলেমেয়েরা ঘরে বসেই কমপিউটারের মাধ্যমে করতে পারে। ইংরেজী বলা হলো এজন্য যে, বেশির ভাগ কাজই হয়তো হবে ইংরেজীতে। তবে কারো যদি অন্য ভাষায় দখল থাকে, তারাও কাজ পেতে পারেন।
যেমন ধরুন, এই মহুর্তে যদি আমরা ওডেস্ক.কমএর বিভিন্ন ক্যাটাগরীর কাজগুলো দেখি, তাহলে দেখতে পাবো “লেখালেখির কাজ“-এর জন্য নীচের কাজগুলোর পোস্টিং রয়েছে-

— Technical Writing (502)
— Website Content (1116)
— Blog & Article Writing (2907)
— Copywriting (373)
— Translation (648)
— Creative Writing (492)
— Other – Writing & Translation (814)
খেয়াল করলে দেখা যাবে, সবচে বেশি কাজ রয়েছে “ওয়েব সাইট কনটেন্ট” (১,১১৬) এবং “ব্লগ ও আর্টিকেল” লেখাতে (২,৯০৭)। এমন কি ক্রিয়েটিভ লেখালেখির জন্যও প্রায় পাঁচশ’র মতো কাজ রয়েছে। এবং এটা প্রতিনিয়ত আসতেই থাকবে। এ সংখ্যাগুলো আমি যখন এই লেখাটি লিখছি সেই মুহুর্তের। এ পরিমান কম-বেশি হতে পারে বিভিন্ন সময়ে। মূল কথাটি হলো – কাজের পরিমান অনেক; এবং আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যারা চাকরীর জন্য হণ্যে হয়ে ঘুরছেন, তারা ঘরে বসে এগুলো করতে পারেন।
তবে একটি বিষয় সবার পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন তাহলো – এগুলো কিন্তু প্রফেশনাল কাজ। এবং যারা কাজগুলো দিচ্ছেন, তারা সিরিয়াস প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশী নয়। আমাদের ভেতর পেশাদারিত্বের বড়ই অভাব রয়েছে। সব কিছুতেই একটা গোজামিল এবং শর্টকার্ট মারার চিন্তা এবং চেস্টা আমাদের আছে। কিন্তু আপনি এখন হয়ে যাচ্ছেন একজন গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দা। তাই আপনার আউটলুকটা দয়া করে একটু পাল্টাবেন। এটা এতো বেশি করে বলছি এই কারণে যে, আমি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করেছি। এটা নিয়ে দিনের পর দিন কথা বলেও ভালো ফল খুব একটা পাওয়া যায়নি। অনেকটা কুকুরের লেজের মতো বার বার বেকে যায়। কিন্তু মানুষ তো চেস্টা করলেই পাল্টাতে পারে, তাই না? তাই যখন আপনি ফ্রিল্যান্স নিয়ে চিন্তা করবেন, তার প্রথম কথাটিই হলো – পেশাদারিত্ব দৃস্টিভঙ্গি।
তাই যখুনি আপনি ইন্টারনেটে কাজের বিষয়ে কারো সাথে কথা বলবেন, যোগাযোগ করবেন, সিরিয়াসলী করবেন। মনে রাখবেন, এই গ্রহের আরেক পাশের মানুষরা সিরিয়াস এবং “কঠিন পরিশ্রমী” মানুষ।
একটু বেশি লেকচার দিয়ে ফেলেছি। তবে উপরের কথাগুলোকে মেনে নিয়ে যদি চলেন, তাহলে টিপসগুলো বুঝতে সুবিধে হবে। এবারে সত্যি সত্যি কিছু টিপস দিয়ে দেই :-)
১. সব সময় ঠিক কী কাজটি করতে বলছে, সেটা ভালো করে পড়ে বুঝে নিন। আমাদের একটি স্বভাব হলো, কারো মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে নিজেই কথাটা শেষ করে দেয়া। যেমন ধরুন, আমি বলতে শুরু করলাম, “আচ্ছা, কালকে আমি যখন বাসা থেকে —” ; আমি কথা শেষ করার আগেই আমার সামনের লোকটি আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললো, “জ্বী, আমি আপনাকে বাসা থেকে নিয়ে আসবো।”
আমি কিন্তু মোটেও তাকে আমার বাসা থেকে নিয়ে যেতে বলিনি। আসলে আমি কথাটি শেষই করিনি। মুখের কথা কেড়ে নেয়া আমাদের একটি খুবই বদভ্যাস। এর অর্থ হলো, আমরা পুরো জিনিসটা না বুঝেই “ঝাপিয়ে” পড়ছি। দয়া করে, এখানে সেটা করবেন না। যারা কাজের পোস্টিং দিয়েছে, তাদের লেখাটি ভালো করে পড়ুন। প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞেস করুন। কোনও কিছু আগেই ধরে নেবেন না। আর যদি কাজটি বুঝতে না পারেন, তাহলে সেটাতে “বিড” করার প্রয়োজন নেই। পরবর্তী কাজে মন দিন।
২. এখানে কাজ নিতে হয় “বিড” করে – নিলামে। আপনি যে কাজটির জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা চাইছেন, সেটার জন্য আরো অনেক মানুষই বিড করছে। বিড প্রক্রিয়ায় বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন নেই। কাজটি করতে কত ডলার নেবেন, সেটা পরিস্কার করে বলে দিন।
যদি কোনও শর্ত দিতে চান, তাহলে সেটাও খুব নির্দিষ্ট করে পরিস্কারভাবে লিখে দিন – যেমন কাজটি করতে কত ঘন্টা লাগবে, তাতে কত চার্জ হবে। অতিরিক্ত কাজের জন্য আর কত দিতে হবে ইত্যাদি। কোনও প্রকার বাড়তি বা ফালতু অনুরোধ বা তথ্য দিয়ে নিজের পেশাদারিত্বকে কমিয়ে ধরবেন না।
৩. আপনি তাদেরকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারেন। এবং আপনার কোনও নমুনা কাজ দেখাতে চাইলে সেটাও করতে পারেন। তবে, দু’তিনটা ভালো নমুনা কাজ দেখালেই হলো। একটি লম্বা তালিকা বানিয়ে দিয়ে বিপদ ডেকে আনবেন। একটা উদাহরণ দেই। আমার পরিচিত একটি আমেরিকান কোম্পানী কাজের জন্য পোস্টিং দিল। অনেকগুলো বিড এলো বাংলাদেশ থেকে। আমি একদিন গিয়েছি তার অফিসে। তিনি আমাকে হাসতে হাসতে দেখালেন, আমাদের দেশ থেকে যারা বিড করেছে তাদের প্রোফাইল। আমি একটি ছেলের প্রোফাইলে দেখলাম, সে ৫০/৬০টি লিংক দিয়েছে। আমি কয়েকটা ক্লিক করলাম। তার কিছু ভালো কাজ আছে। কিন্তু ওই লম্বা তালিকায় অনেক খারাপ কাজও রয়েছে, যা তার মানকে কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি কিছু লিংক ঠিক মতো কাজও করছিল না। এই ছেলেটিকে কি কাজ দেয়া উচিৎ?
৪. বিড করার সময় সব সময় সর্বনিন্ম রেট দিয়ে কাজ ধরার চেস্টা করবেন না। যারা কাজটি দেবে, তাদেরকে সর্বনিন্ম দরদাতাকে কাজ দিতে হবে এমন কোনও কথা নেই। আসলে যারা সবচে কম পয়সায় কাজ করে, তাদের কাজের মান খারাপ হয়। তাই ভালো কাজের জন্য মাঝারী ধরনের চার্জ করুন। খুব বেশি করলে আপনি দরপত্রে জিতবেন না। আবার খুব কম করলে, আপনি খামাকা টাকাটা কম পাবেন। আবার কাজটি নাও পেতে পারেন।
৫. নিজেকে কখনই বেশি বিক্রি করবেন না। ইংরেজীতে এটাকে বলে “ওভার সেল” – অর্থ্যাৎ আপনি নিজেকে অতিরিক্ত বিক্রি করে ফেলেছন। ধরুন, একটা কাজ আপনি ভালোভাবেই করতে পারবেন বলে মনে করছেন, এবং আপনি আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু ওই কাজটি পাবার জন্য আপনি হয়তো মরিয়া হয়ে অতিরিক্ত তথ্য দেয়া শুরু করলেন। আপনি নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করলেন। সেটা করার প্রয়োজন নেই। নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে শিখুন।
লেখাটা আরো ছোট রাখতে চেয়েছিলাম, হয়ে উঠলো না। বড় লেখায় মানুষের ধৈর্য্যচুতি হয়; তাও আবার সেটা যদি হয় উপদেশমূলক প্যাঁচপ্যাচানী। তাই আজকের মতো এখানেই থামছি। কিছু দিন পর আবার কিছু লেখার চেষ্টা করবো।
Comments